ইসলামে খাবার গ্রহণের আদব
লেখক: মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
الحمد لله رب العالمين، وصلى الله وسلم وبارك على نبينا محمدٍ وعلى آله وصحبه أجمعين. وبعد:
বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে খাবার গ্রহণের আদব বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। কেননা খাওয়া-দাওয়া আমাদের প্রাত্যহিক বিষয়। তাই এ বিষয়ের আদব ভাল করে রপ্ত করাও জরুরি। উলামগণ এ বিষয়টিকে বিশ্লিষ্ট আকারে বর্ণনা করেছেন। ব্যাখ্যা করেছেন বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। কেননা এ বিষয়ে বহু হাদীস, ও শরয়ী টেক্সট রয়েছে। শরীয়ত মানবজীবনের সকল দিককেই যথার্থরূপে গুরুত্ব দিয়েছে। উপরন্তু যে দিকটি মুসলমানের জীবনে বেশি উপস্থিত সে দিকটির উপর শরীয়তের গুরুত্ব প্রদানের মাত্রাও সমানুপাতিক হারে অধিক।
প্রবন্ধটি পড়ে শেয়ার করতে ভুলবেন না
• খাদ্য বিষয়ক অথবা খাবার গ্রহণের আদব অনেক; খাবার গ্রহণের আদবের মধ্যে হল:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম ‘ যখন জুনুব (স্বামী-স্ত্রী মিলনজনিত অপবিত্র) অবস্থায় ঘুমাতে যেতেন তখন তিনি ওজু করে নিতেন। আর যখন তিনি খাবার গ্রহণের ইচ্ছা করতেন তখন হাত ধুয়ে নিতেন।)
হাদীসটি আলোচ্য মাসআলার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
‘ হে বালক! আল্লাহর নাম নাও’ ( অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বল)
বরং আরো স্পষ্ট ভাষায় এভাবে এসেছে :
( হে বালক! যখন তুমি খাবার গ্রহণ করতে ইচ্ছা করবে, বল, বিসমিল্লাহ।
( ডান হাত দিয়ে খাও)
হে বৎস! কাছে এসো’।
(তোমার কাছের অংশ থেকে খাও)
(তোমরা জমায়েত হয়ে খাবার গ্রহণ কর, তাতে আল্লাহর নাম স্মরণ কর। খাবারে তোমাদেরকে বরকত দেয়া হবে)
জমায়েত হয়ে খাবার গ্রহণের একটি ফল এই যে এ অবস্থায় একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়, আর দু’জনেরটা তিনজন বা চারজনের জন্য। আর চারজনেরটা পাঁচ অথবা ছয়জনের জন্য। হাদীসটি বিশুদ্ধ এবং ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে।
নাসায়ী শরীফের সহীহ হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
(তোমাদের মধ্যে কেউ যখন খাবার খাবে, সে যেন তার হাত না মুছে যতক্ষণ না সে তা চেটে অথবা অন্যকে দিয়ে চাটিয়ে নেয়। আর থালা যেন উঠিয়ে না নেয় যতক্ষণ না তা লেহন করা হবে; কেননা খাবারের শেষ অংশটায় বরকত রয়েছে।)
এটা হল খাবারের আট নম্বর আদব। অর্থাৎ থালা লেহন করে খাবারের শেষ অংশের বরকত নেওয়া।
(যখন তোমাদের কেউ খাবার খায় এবং তার হাত থেকে লোকমা পড়ে যায়, তাহলে যে অংশে (ময়লা লেগেছে বলে) সন্দেহ হয় তা সরিয়ে ফেলবে, এবং ভক্ষণ করবে। শয়তানের জন্য ফেলে রাখবে না।)
( ওটা অধিক বরকতের কারণ)
( তোমরা খাবারের পার্শ্ব থেকে খাও, মধ্যভাগ ছেড়ে দাও, ওতে তোমাদেরকে বরকত দেওয়া হবে।)
অন্য এক হাদীসে তিনি বলেছেন,
( বিসমিল্লাহ বলে খাবারের পার্শ্ব থেকে খাও, তার প্রধান অংশ ছেড়ে দাও; কেননা খাবারের বরকত উপর দিক থেকে আসে।)
তিনি আরো বলেছেন,
( বরকত, পাত্রের মধ্যখানে, অতঃপর তোমরা পার্শ্ব থেকে খাও, প্রধান অংশ থেকে খেয়ো না।)
(একজন দাস যেভাবে খায় আমিও সেভাবে খাই, একজন দাস যেভাবে বসে আমিও সেভাবে বসি; আর আমি তো দাস ভিন্ন অন্য কিছু নই।)
অন্য এক হাদীসে বলেছেন,
(একজন দাস যেভাবে খারার খায় আমিও সেভাবে খাবার খাই, আমার আত্মা যার হাতে তার কসম, দুনিয়া যদি আল্লাহর কাছে একটি মাছির পাখা পরিমাণ ওজনসম্পন্ন হত, তাহলে কোনো কাফেরকে তিনি এক ঢোক পানিও খেতে দিতেন না।)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
(যখন কারও কাছে তার খাদেম- যে খাবার তৈরি ও ধোঁয়ার কষ্ট সয়েছে- খাবার নিয়ে আসবে সে যেন তাকে তার সঙ্গেই বসায়, আর যদি না বসায় তাহলে যেন এক লোকমা বা দুই লোকমা তাকে দেয়।)
এতে একদিকে রন্ধনকারী খাদেম, যে খাবার পাকাতে শ্রম দিয়েছে, ধোঁয়া আগুনের তাপ ইত্যাদি সহ্য করেছে, তাকে সাথে বসিয়ে পুরস্কৃত করার আদর্শ পাওয়া যাচ্ছে, অন্য দিকে তাওয়াজু ও বিনম্রতারও একটি দিক রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
(যদি তার মনঃপূত হয় খাবে, অন্যথায় রেখে দিবে।)
অন্য এক হাদীসে এসেছে,
(নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন গুইসাব খেতে দেয়া হল, তিনি তা রেখে দিলেন এবং বললেন, এটা আমার কাওমের এলাকায় নেই। তাই এতে আগ্রহ পাচ্ছি না।)
(আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পোকাবিশিষ্ট খেজুর নিয়ে আসা হত, অতঃপর তিনি তা তালাশ করে বের করতেন)
(তোমরা যখন গোশ্ত পাকাবে, তাতে ঝোল বাড়িয়ে দেবে, প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে এটা একটা বদান্যতা।)
তিনি আরো বলেছেন,
(তোমাদের মধ্যে যখন কেউ পাতিলে রান্না করবে, সে যেন তার ঝোল বাড়িয়ে দেয়, এবং তা থেকে প্রতিবেশীকে দেয়।)
অর্থাৎ খাবার ও ঝোল উভয়টাই।
(তোমাদের কারও পাত্রে মাছি পড়ে গেলে সে যেন তা ডুবিয়ে দেয়, কেননা ওর এক ডানায় রোগ ও অন্য ডানায় শেফা রয়েছে। মাছির যে ডানায় রোগ সেটা দিয়ে সে প্রতিরোধ করে।)
অন্য এক বর্ণায় এসেছে,
(আর মাছি বিষটাকে এগিয়ে দেয়, শেফাটাকে পিছিয়ে রাখে, অতঃপর ওর পুরোটা ডুবিয়ে দিলে তা চলে যায়)
( তোমার এই বিরক্তিকর উচ্চ আওয়াজ বন্ধ কর)
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
( তোমার এই বিরক্তিকর উচ্চ আওয়াজ হতে বারণ হও।)
(তোমাদের মধ্যে যখন কেউ ঘুমাতে যাবে আর তার হাতে খাবারের গন্ধ রয়েছে- যেমন গোশ্ত, চর্বি ইত্যাদির গন্ধ- সে যেন তা ধুয়ে নেয়, অন্যথায় কোনো কিছু হলে তার দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে।)
( আর আমি, আমি তো হেলান দিয়ে খাই না।)
একতৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, একতৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য, আরেক তৃতীয়াংশ নিজের জন্য। বনি আদমের তো মাত্র কয়েক লোকমাই যথেষ্ট যা তার মেরুদণ্ড সোজা রাখবে।
রকমারি খাবার ও পানীয়ে অপচয়কে তিনি নিন্দা করেছেন।
(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন আঙ্গুল দিয়ে খেতেন। আর তিনি যখন খাবার খেতেন, তিনি তাঁর আঙ্গুল তিনটি চেটে খেতেন।
এর প্রমাণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীস,
( রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরমুজের সাথে তাজা খেজুর খেতেন, এবং বলতেন, (আমি এটার তপ্ততা ওটার শীতলতা দিয়ে দমন করি। আর ওটার শীতলতা এটার তপ্ততা দিয়ে দমন করি।)
এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাবারের প্রকার ও ধরনে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি নির্দেশ করছে।
(যে বাড়িতে খেজুর নেই সে বাড়িতে যেন খাবারই নেই।)
অন্য এক হাদীসে এসেছে,
(যে বাড়িতে খেজুর নেই সে বাড়ীর লোকজন ক্ষুধার্ত।
আরেক হাদীসে এসেছে,
( তোমরা তেল খাও ও শরীরে ব্যবহার কর।)
(সিরকা, সুন্দর এক ব্যঞ্জন।)
এগুলোকে প্রাধান্য দেওয়ার পর যার যার পছন্দতম হালাল খাদ্য খাবে। উদাহরণত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রান ও কদু পছন্দ করতেন।
( তোমরা রুটিকে সম্মান কর।)
তবে রুটি চাকু দিয়ে কাটা যাবে না এমন কোনো কথা আসে নি। রুটিকে কেবল সম্মান করতেই বলা হয়েছে। এ কারণে রুটি ফেলে দেয়া যাবে না। যদি কেউ তা দেখে তবে অন্য খাবারের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দেবে। সে হিসেবে মাটিতে ফেলে রাখা অবস্থায় যদি কেউ কোন রুটি পায় তবে তা উঠিয়ে উঁচু জায়গায় রাখবে, অথবা জন্তু ইত্যাদিকে খাওয়াবে।
সমাপ্ত
লেখক: মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
অনুবাদক: আবু শুআইব মুহাম্মাদ সিদ্দীক
সূত্র: ইসলামহাউজ
‘আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক’
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। “কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা” [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
আন-নূর ইসলামিক ম্যারেজ মিডিয়া – একসাথে জান্নাতে, ইন-শা-আল্লাহ
সহীহ আকীদাহ সম্পন্ন দ্বীনদার পাত্র-পাত্রী সন্ধান কেন্দ্র
বায়োডাটা পাঠাতে ফরম | আমাদের কাজের প্রসিডিউর | শর্তসমূহ | আমাদের ঠিকানা