বোনদের দেরিতে বিয়ে ! এজন্য দায়ী কে ?

বোনদের দেরিতে বিয়ে ! এজন্য দায়ী কে ?

বোনদের দেরিতে বিয়ে এজন্য দায়ী কে

আমাদের অনেক বোনদের দেরিতে বিয়ে কেন হয় তার কারন অনুসন্ধান করতে গিয়ে নিচে কিছু ঘটনার কথা লিখবো।  যিনি এই লেখাটা পড়বেন, অনুগ্রহ করে আপনার বাবাকে পড়ে শোনান, মা কে পড়ে শোনান, বড় ভাইকে/ ভাইদেরকে পড়ে শোনান।
এমনকি মেয়েরা, আপনাকে, তোমাকে বলছি, পড় এবং ভাব………………

ঘটনা-১
মাস ছয়েক আগে একবোনের কাজ নিয়েছি, বোনটি একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাল বেতনে চাকরি করে। বয়স ২৭ চলছে। রক্ষণশীল বাবা মায়ের, মেয়ের বয়সের দিকে খেয়াল নেই। দেখছে, দেখা যাক এরকম গা ছেড়ে দেওয়া অবস্থা মেয়ের বিয়ে নিয়ে। সবথেকে ভাল হয় মেয়ে নিজে যদি পাত্রের সন্ধান আনতে পারে। বাহ! কি দারুন। মেয়েও বুঝেছে। তাকেই কিছু করতে হবে। আননুরে আসা।

ঘটনা-২
এক বোনের জন্য কমপক্ষে ২০ টা প্রপোজাল থেকে পজিটিভ রিপ্লাই পেয়েছিলাম। কিন্ত তার পরিবার দ্বীন তো থাক স্বাভাবিক ধার্মিকতা কে প্রাধান্য দেয় না বলে শেষ পর্যন্ত আমরা ঐ বোনের কাজে আসতে পারিনি। আর একটা বিষয় ছিল মেয়েরা যেমন ঢাকায় বাড়ি আছে ছেলেও ঢাকার হতে হবে।

ঘটনা-৩
এক বোন কে এক দ্বীনি ভাইয়ের সাথে দেখা করালাম। দুজন দুজনকে পছন্দ করল। কিন্ত মেয়ের পরিবার আগালো না। তাদের এত ছোট মেয়েকে বিয়ে দেয়ার ইচ্ছা নেই। মেয়ে পড়াশোনা করে চাকরি করবে তারপর মেয়ের বিয়ে তার আগে নয়।

ঘটনা-৪,
কিছুদিন আগে এক সিনিয়র বোনের জন্য পোস্ট দিয়েছিলাম। পরিবারের পিছনে সময় দিতে দিতে নিজের দিকে তাকানো হয়নি। এখন নিঃসঙ্গতা কে আর বয়ে বেড়াতে পারছেন না। একজন সঙ্গী চাই।

ঘটনা-৫,
ঈদের তিনদিন পর এক ক্লায়েন্টের বড় বোন ফোন দিল। ঐ আপা ফোনের ওপাশেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। ওনার বাবা মারা গেছেন। বোনের বিয়ে হচ্ছে না। খুব বেশি চিন্তিত। আর আমার ক্লায়েন্টের বয়স চলছে ৩৪। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কথা প্রসঙ্গে ঐ বাবা অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা বলেছিলেন। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটাই তিনি করে যেতে পারেননি। এই পরিবারের অনীহা মেয়েটিকেও বিয়েতে অনেকটা অনাগ্রহী করে ফেলেছে। অথচ শুভাকাঙ্ক্ষী বড় বোন ঠিকই বুঝছে বোনের কষ্টটা।

ঘটনা- ৬, পাত্র-পাত্রী দেখা দেখি হল। পছন্দ হল। ডেট ঠিক হল যে মেয়ের বাসায় ঘরোয়া ভাবে কাবিন হবে। হঠাৎ আগের দিন ছেলে জানালো তার বাবাকে কিছুতেই রাজি করাতে পারছে না। ভেবেছিল শেষ পর্যন্ত পারবে।

এরকম বহু পরিচিত অস্বস্তিকর অবস্থার ভেতর দিয়ে যাই। আমরা পোস্ট দেই, আর নাক উচু, নিচু, বাকা, থাবড়া, অন্ধ, বধির সব ছেলেরা চারপাশের বাস্তবতা দেখেও বয়স নিয়ে মেয়েদের ছোট করতে ছাড়ে না।

সেই সব ছেলেদেরকে বলছি, আস আননুরে, দেখে যাও। কয়েকশ বায়োডাটা দেখাতে পারব। এই সমাজের ছেলেদের। একটু মোচ দাড়ি গজালেই, দুই কলম দ্বীন শিখেই বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যায়। অথচ ঘরে বড় বোন আছে, বোনকে বিয়ে দিতে হবে সেই দিকে খেয়াল করে না। ভাই হিসেবে পরিবারকে বোনের বিয়ের ব্যাপারে তাড়া দেওয়া, পাত্র খোঁজা সেসবে তাদের দায় নেই। ব্যাতিক্রম নেই তা বলব না। তবে এটা কে অস্বীকার করতে পারবে যে, এই সমাজের বাবা, ভাইয়েরা দায়িত্বে গাফেল বলেই মেয়েদের এই অবস্থা। মেয়েকে খাইয়ে, দাইয়ে বড় করে, এম এ পাশ করিয়েই শেষ।

 ওয়ালি একটি আরবি শব্দ যার অর্থ দায়িত্বপ্রাপ্ত, রক্ষক, সাহায্যকারী ইত্যাদি।

ভাইদেরকে বলছি, আপনি যেকোন মেয়েকে প্রস্তাব দিয়ে তার সম্মতিতে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে আসতে পারেন।

আর আল্লাহ আপনাকে বোনের ওয়ালি বানিয়ে সম্মানিত করেছেন।বোনকে সঠিক সময়ে বিয়ে দিয়ে এই সম্মানের শুকরিয়া আদায় করুন।
সেদিন এক মা বলছে, মেয়ে অনেক শিক্ষিত, সেরকম শিক্ষিত ছেলে চায়। স্ত্রেইট মুখের উপর বলে ফেললাম অনার্স / মাস্টার্স মাছ ভাত। এত লাফালাফির কিছু নেই। একাডেমিক পড়াশোনা সভ্য জীবনের একটা দিক। তাই বলে মেয়ে এম এ পাশ, ছেলে এম এ পাশ এ বলে লাফালাফির কিছু নেই। ভাবছি, কেয়ামতের মাঠে সেইসব মায়েদের কি হবে, যাদের মেয়ের চাকরি নিয়ে চিন্তা হয় কিন্ত বিয়ে নিয়ে চিন্তা হয় না।

আমাদের এদেশে এখন মেয়েদের যুদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয় না। বাবা মায়েরা হাত ধরে সেখানে রেখে আসেন। চাকরির ক্ষেত্রেও তাই। মেয়েদের মুখ ফুটে বলতে হয় না কি চাই। বাকি থাকে বিয়ে। বলতে পারে না, বিয়ে দিয়ে দাও। সেটাই হচ্ছে, এই দেশের ছেলেমেয়েদের বিশেষ করে মেয়েদের কাল। আশায় থাকে, বাবা মা দেখে শুনে বিয়ে দিবে। কিন্ত, বাবার মনে হতে হবে তো মেয়ে বড় হয়েছে। এদেশে মায়েদের কাছে তো মেয়েরা কখনোই বড় হয় না। তাই মায়েরা বাসর ঘরে মেয়েকে পাঠানোর আগে এক বয়ান দেয় আর পরের দিন তার ফিডব্যাক নেয়। ফলাফল, এদেশে অধিকাংশ ডিভোর্সের পেছনে থাকে মায়েদের Interfere .

আসুন না একদিন, কেউ একজন বলুন, সন্তান কে ভাল মানুষ বানানোর চেষ্টা করছি। দশজন তাকে ভাল ছেলে / ভাল মেয়ে বলে চিনে। তার জন্য ভাল কাউকে খুঁজে দিন।আমরা ধন্য হই আপনাকে দেখে। শিখি আপনার থেকে মানুষ হওয়া। ভয় নেই, আমরা নিজ দায়িত্বে সামাজিক অবস্থান মেলানোর চেষ্টা করব। আপনাকে বলতে হবে না। জীবনতো আর বাংলা সিনেমা নয় যে, রিকশাওয়ালার মেয়ের বায়োডাটা পাঠিয়ে দিব মুসা বিন শমশের এর ছেলের কাছে!!

কি দাম দিব ঐ মেয়েটার আর ঐ ছেলেটার এম এ / এমবিএ পাশ করার। মতামত দিতে দিতে সবাই ফেসবুক এর ওয়াল ভাংচুর করে। কিন্ত সাহস করে পরিবারে বলতে পারে না আমাকে বিয়ে দাও। একজন দ্বীনদার পাত্র দেখে/ পাত্রী দেখে।
আপনি বলতে পারেন না নিজের কথা তো আমরা কি করব?
আরে ফেরাউনের ও আল্লাহর উপর ভয় ছিল। সে গোপনে গোপনে আল্লাহ কে ডাকত। আপনারা পরিবারের প্রতি সুধারনা রাখুন। বায়োডাটা একটা পাঠিয়ে দুদিন পরপর আমাদের মেইল করবেন, মেসেজ করবেন, আমরা ইসলামিক প্রতিষ্ঠান, আল্লাহর ভয়ে যেন কাজ করি। সময় পার করে আমাদের কাছে এসে এই কথা বললে হবে?

বাবা কে হাদিস কোট করে বলতে পারেন না, আপনার বিয়ে দেয়া তার দায়িত্ব।যদি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা কোন মুসলিম যুবকের 1 আপনার বিয়ে দিয়ে না মরলে তার কি হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে?
তারপর, বাবা যখন পর্দার বিষয়ে সাপোর্ট দেন না, দাইয়ুস সংক্রান্ত হাদিস গুলো একটা বড় আর্ট পেপারে লিখে ঘরে টানিয়ে দিতে পারেন না?
যখন বলে, চাকরি করতেই হবে, তখন ফ্রি মিক্সিং এর হাদিস গুলো দেখিয়ে বলতে পারেন না, বাবা হয়ে মেয়েকে ফ্রি মিক্সিং এর সুযোগ করে দিচ্ছ?
আপনারা সবাই বলেন, অনেক কথা। একটা বয়স্ক মেয়ের বিয়ে নিয়ে পোস্ট দিলে, এখন কেন বিয়ে করবে?
এই বয়সে এরকম চায়?
এত বয়সে বিয়ে করেনি আবার দ্বীনদার?
তাই, বলছি, reminder দিচ্ছি, কথার দায় নিয়ে কথা বলুন নয়তো চুপ থাকুন।

ভাই/ বাবা আপনাদের বলছি, অনেক পারিপার্শ্বিকতা আজকের এ অবস্থার জন্য দায়ী। কিম্ত এটাও সত্য আপনাকে, আমাকে, আমাদেরকে নিয়েই সমাজ। কোন সমাজব্যবস্হারই নিজস্ব নাম নেই, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নেই। আপনার আমার চেহারা, আচরণ, জীবনযাপনে সমাজ একটা কমন নাম পায়, পরিচিতি পায়। তাই এদেশের, এই সমাজের মেয়েদের দেরিতে বিয়ে, সময়মত বিয়ে না হওয়ার দায় প্রথম যায় পরিবার, তারপর পরিবার প্রধান বাবা এবং ভাইয়ের উপর।

আর, কমন একটা বর্তমান সমস্যা হচ্ছে পারিবারিক দ্বীন এবং নতুন প্র্যাকটিসিং ভাই বোনদের দ্বীনি মতপার্থক্য। অধিকাংশ পরিবারেই পাত্র পাত্রী খোঁজার ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এমনকি এই পরিস্থিতিতে বাবা, ভাইয়েরা অনেক সময় মেয়েদেরকে ” পারলে তোমরা খুঁজে আন” এরকম ভাবে দায়িত্বে অবহেলা করে।

এক্ষেত্রে দ্বীনি ভাই বোনদের বলব, অনেকেই আছেন দাওয়াতী কাজ করেন কিন্ত ধরেই বসে আছেন বাবা মা কে পরিবর্তন করা সম্ভব না। তারা কিছুতেই মানবে না। এমতোবস্হায় ভাই/ বোন আপনাকে বলছি, এই সমাজ, দেশ কে দ্বীন শেখানোর জন্য, দাওয়াত দেওয়ার জন্য আপনাকে জবাব দিতে হবে না। তবে নিজে যতটুকু জানের তার কতটুকু সন্তান হিসেবে অজ্ঞ বাবা-মা কে জানানোর, মানানোর চেষ্টা করেছেন তার হিসাব তো দিতে হবে। আন্তরিকতার সাথে মনে করিয়ে দেই, এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ১০ বছর দাওয়াত দিয়ে হাতে গোনা কয়েকজনকে পাশে পেয়েছিলেন। আপনি আমি কি জীবনটাকে একটু বেশি সহজ করে ভাবছি না।

সব শেষে মেয়েদের কে বলছি, এই সব কান্নার ঢং ছেড়ে একটু বাস্তবে আসেন। আপনার কথা আপনি বলতে শিখুন, বলুন। আপনাদের সকলের ফেসবুক ঘাটলে সবার ফ্রেন্ড লিষ্টে কয়েকশ মানুষকে পাওয়া যাবে। কি লাভ হবে এতে। আপনার বাবা, মা, আপনার ভাই/ বোন একে অপরের সঠিক শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারলেন না, সেখানে দেশসুদ্ধ মানুষের বন্ধুসুলভ আচরণে কতটা লাভবান আপনি হবেন! কি বিএ, এম এ পাশ দিলেন যে, নিজের পাওনার কথা নিজের বাবা কে, ভাইকে বলতে পারেন না। আপনি কি জানেন ? দেরিতে বিয়ে হলে যে মেয়েরা নানা ধরণের মানসিক সমস্যায় ভোগে ? বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই রিপোর্টটি পড়ে দেখুন।

নিজের কথা নিজে বলুন। নিজের জন্য নিজে আগে ভাবুন। জীবন পাল্টে যাবে।

[siteorigin_widget class=”Recent_Posts_Widget_Extended”][/siteorigin_widget]

One thought on “বোনদের দেরিতে বিয়ে ! এজন্য দায়ী কে ?

  1. darun lekha. ekla ekla diner pothe asa ami apnar ei advice guloi follow koresilam.Allah se budhi bibek agei diyechilen. Folafol amar poribar din bujhese, didar howar try korese. dindarer baire onno rokom sele khojar agrohi hon ni. amar motke gurutto diyesen. Nijer engineer bole engineer chele petei hobe emon manosikota somoy thaktei bad diyese. Folafol sothik somoye biye& peyesi akjon dindar, sottikarer susikhito manush thik jemon ti ami amar mon cheyesilo.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *