সুখি দাম্পত্যের জন্য সবচেয়ে জরুরী অথচ সবচেয়ে উপেক্ষিত দুটি বিষয়

সুখি দাম্পত্যে জন্য সবচেয়ে জরুরী অথচ সবচেয়ে উপেক্ষিত দুটি বিষয়

 

সুখি পরিবারের জন্য সবচেয়ে জরুরী অথচ সবচেয়ে উপেক্ষিত দুটি বিষয়

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

প্রথমেই সেই মহান রবের প্রশংসা, যিনি নিখিল জাহানের রব, প্রতিপালক; আলহামদুলিল্লাহ।  দুরুদ ও সালাম পেশ করছি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক প্রাণপ্রিয় মুহাম্মদ সা. এর প্রতি; আল্লাহুম্মাহ সাল্লি আলাইহি, আল্লাহুম্মা বারিক আলাইহি। আল্লাহ আমাদের সকলকে তার প্রতিষ্ঠিত দ্বীনকে বোঝার ও মেনে চলার তাওফিক দিন। যার প্রতিটি দিক আমাদের দাম্পত্যকে সুন্দর ও অনাবিল করতে জরূরী। আজ আপনাদের সাথে দুটি এমন বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে উল্লেখ করতে চাই যা প্রায় ৯৫ভাগ বিবাহ, দাম্পত্য ও দম্পতিরাই হয়ত এড়িয়ে যান বা অজ্ঞতার কারণে ভুলে থাকেন। অথচ বিষয় দুুটি সুখি দাম্পত্যের জন্য সহায়ক ও বরকতের জন্য জরূরী। প্রথম বিষয়টি হচ্ছে, 

অতিথিবৃন্দ কর্তৃক বর ও কণের জন্য বরকতের দোআ:- 

আপনারাও আমার সাথে একমত হবেন যে বর্তমানে যারা বিবাহ অনুষ্ঠান সমূহে উপস্থিত হন তাদের মধ্যে হাতে হয়ত কিছু মানুষ পাওয়া যাবে যারা এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন। অধিকাংশ মানুষই মূলত এই দুআটি জানেন না বা বিবাহ অনুষ্ঠানে পাত্রের সাথে দেখা করে অথবা একান্তে এ দুআটি করেন না। অথচ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। আসুন জেনে নেই সেই দুআটিতে মূলত কি আছে। 

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিবাহিত ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলতেন,
بَارَكَ اللهُ لَكَ، وَبَارَكَ عَلَيْكَ، وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِي خَيْر
“বা-রাকাল্লা-হু লাকা ওয়াবা-রাকা ‘আলাইকা ওয়া জামা‘আ বাইনাকুমা ফী খাইরিন্”
অর্থঃ আল্লাহ আপনার জন্য বরকতদান করুন, আপনার উপর বরকত নাযিল করুন এবং কল্যাণের সাথে আপনাদের উভয়কে একত্রিত করুন।
(হাদীসটি নাসাঈ ব্যতীত সকল সুনানগ্রন্থকারগণই সংকলন করেছেন। আবু দাঊদ, নং ২১৩০; তিরমিযী, নং ১০৯১; ইবন মাজাহ, নং ১৯০৫; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল-লাইলাহ, নং ২৫৯। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী ১/৩১৬।)

- আসুন বিষয়টির একটু গভীরে যাই। কি হয় এই দুআটি পাঠ করলে? 

১. এর মাধ্যমে মুসলিমদের পারস্পরিক সৌহাদ্য বৃদ্ধি পায়। 

২. দুআ করা ইবাদাত। যাতে আছে কল্যাণ। আল্লাহ চাইলে অপর দম্পতির প্রতি আপনার দুআ আপনার দাম্পত্যকে সুন্দর করে দুলতে পারে। 

৩. এ দুআর মাধ্যমে দুআকারীর বদ-নজর থেকে নব্য দম্পতি মুক্ত হয়ে যায়। 

৪. মুসলিমদের দুআর মাধ্যমে আল্লাহর ইচ্ছায় উভয়ের দাম্পত্যে বারাকাহ ও কল্যাণের পথ সহজ হয়ে যায়। 

৫. বর্তমানে ভুলে যাওয়া একটি সুন্নাহকে জিন্দা করার অফুরন্ত সাওয়াব হাসিল হবে ইংশাআল্লাহ। 

৬. অতিথিদের পক্ষ থেকে নব দম্পতিদের প্রাপ্য হক হচ্ছে দুআ যা উপঠৌকন দিয়ে আদায় হয় না। আর বিবাহ অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হলে তাতে উপস্থিত হওয়া ও উভয়ের জন্য দুআ করা রাসূল সা. এর নির্দেশ। সেই হক্ব আদায় হয়ে যায়। 

৭. বর্তমানে অনেকেই বিবাহকে সামাজিক অনুষ্ঠান মনে করেন; এর মাধ্যমে এটা প্রকাশ হয় যে এটা মূলত একটি ইবাদাত। 

উপরোক্ত বিষয়গুলো নজরে রেখে যে বিষয়টির প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই তা হচ্ছে বদ-নজর। বিবাহ অনুষ্ঠানে অনেক মানুষ উপস্থিত হয়। এছাড়া বিবাহ অনুষ্ঠান যত বড় ও জাকজমক হয় তত মানুষের জিহ্বা ও চোখের আপদের সম্ভবনা বেড়ে যায়। তার একটি প্রতিরোধক হচেছ এ দুআটি। মানুষ যখন কারো জন্য বরকতের দুআ করে তখন তার মনে কোন ধরনের হিংসা বা আফসোস বিদ্যমান থাকে না। যেটা বদ-নজর ও এর প্রভাবের অন্যতম কারণ। 

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

الْعَيْنُ حَقٌّ وَلَوْ كَانَ شَيْءٌ سَابَقَ الْقَدَرَ سَبَقَتْهُ الْعَيْنُ وَإِذَا اسْتُغْسِلْتُمْ فَاغْسِلُوا

“বদ নজরের প্রভাব সত্য। কোন জিনিষ যদি তাকদীরকে অতিক্রম করতে পারত, তাহলে বদ নজর তাকে অতিক্রম করত। তোমাদেরকে গোসল করতে বলা হলে তোমরা গোসল করবে এবং গোসলে ব্যবহৃত পানি দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করবে।” নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহ্‌ শরীফে বর্ণিত আছে যে, একদা আমের ইবনে রাবীয়া সাহল ইবনে হুনাইফের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলেন। সাহল ইবনে হুনাইফ (রাঃ) তখন গোসল করতে ছিলেন। আমের ইবনে রাবীয়া সাহলকে দেখে বলল, আমি আজকের মত লুকায়িত সুন্দর চামড়া আর কখনো দেখিনি। এ কথা বলার কিছুক্ষণ পর সাহ্‌ল অসুস্থ হয়ে পড়ে গেল। তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে নিয়ে এসে বলা হল, সাহ্‌ল বদ নজরে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বললেন, তোমরা কাকে সন্দেহ করছ? তারা বলল, আমের ইবনে রাবীয়াকে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কেন তোমাদের কেউ তার ভাইকে হত্যা করতে চায়। কেউ যদি কারো মধ্যে ভাল কিছু দেখে, তাহলে সে যেন তার জন্য ভাই এর কল্যাণ কামনা করে এবং দু’আ করে। অতঃপর তিনি পানি আনতে বললেন এবং আমেরকে অযু করতে বললেন। অযুতে মুখমন্ডল, কনুই সহ উভয় হাত এবং হাটু পর্যন্ত এমনকি লুঙ্গীর নীচ পর্যন্ত ধৌত করে সাহলের শরীরে ঢালতে বললেন। কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় পানির পাত্র যেন পেছন থেকে ঢালে। এটি বাস্তব ঘটনা, যা  অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

তাই আপনার প্রতি, আপনার বিবাহ, দাম্পত্য, বিবাহ অনুষ্ঠানের বিষয়ে বদ-নজরকে উপেক্ষা করা যায় না। তাই উপস্থিত সকলেরই দুআটি পড়া উচিত। আর যেহেতু অধিকাংশই এ দুআটি জানে না তাই আমরা কিছু প্রক্রিয়ায় এ বিষয় অতিথিদের সচেতন করে তুলতে পারি। 

করণীয়:

১. দাওয়াত নামা বা কার্ডে  এই দুআটি উল্লেখ করে সবাইকে এই দুআটি এসে পড়ার অনুরোধ করা যেতে পারে। 

২. ওলীমাহ অনুষ্ঠানে গেটে/ বসার স্থানে/ সবার নজরে পড়ে  এমন স্থানে দুআটি লিখে রাখা যেতে পারে। 

৩. এই দুআটির গুরুত্ব বিষয়ে সামাজিকভাবে সবাইকে সচেতন করে তোলা যেতে পারে। 

৪. আমরা নিজেরাও যারা এ বিষয়ে অবগত আছি তারা দুআ করে অপরকে ‍উৎসাহ করা যেতে পারে। 

৫. বিবাহ পরবর্তী আপনাদের দাম্পত্য জীবনের এমন কিছু প্রকাশ্যে উপস্থাপন না করা যাতে বদ-নজরের বা হিংসার সম্ভবনা রয়েছে। অবশ্যই এ কারণ সামাজিক মিডিয়া যেমন ফেসবুকে এমন কিছু শেয়ার করা ঠিক নয়। 

আমরা সকলে চেষ্টা করলে আল্লাহর ইচ্ছায় এই মৃতপ্রায় সুন্নাতটি আবার অনুশীলনে নিয়ে আসা সহজ হবে। আসুন দ্বিতীয় বিষয়টি জেনে নেই। 

 

 স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর কপালে হাত রেখে রাসূল সা. এর শিখানো দোআ:-

অনেকে বিষয়টি যেভাবেই নিক, এ বিষয়টি সত্য যে মানুষের চিন্তা, নজরের মাধ্যম অকল্যাণ আসতে পারে। যাকে বদ-নজর বলা হয়। ঠিক  এমন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে। ব্যক্তির উপর কিছু বিষয়েও অকল্যাণ থাকতে পারে যেমনটা বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখ হয়েছে, 

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অকল্যাণ নিহিত রয়েছে নারী ও আরোহণে (গাড়িতে)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, অকল্যাণ তিন প্রকার জিনিসে- নারী, বাড়ি ও বাহনে। আর যেখানে শরীয়াতের কোন শিক্ষাকে ‍উপেক্ষা করা হয় সেখানে শয়তানের প্রভাব বেশি থেকে যায়। তাই নব দম্পতির জন্য দুআর এর পাশাপাশি স্বামী কর্তৃক স্ত্রী কপালে হাত রেখে দুআ করা অতি জরূরী। অন্যথায় দাম্পত্যে শয়তানের প্রভাব থেকে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। যার মাধ্যমে দাম্পত্য অসুখি ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। আল্লাহ সবাইকে হিফাযত করুন। 

আসুন জেনে নেই দুআটি, 

রাসূল সা. বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো মেয়েকে বিয়ে করে, বা খাদেম গ্রহণ করে, অথবা বাহন ক্রয় করে, তখন যেন সে বলে,

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ

হে আল্লাহ, আমি এর যত কল্যাণ রয়েছে এবং যত কল্যাণ তার স্বভাবে আপনি দিয়েছেন তা চাই। আর এর যত অকল্যাণ রয়েছে এবং যত অকল্যাণ ওর স্বভাব-চরিত্রে আপনি রেখেছেন তা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।

আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা ‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা ‘আলাইহি

আবু দাঊদ-২/২৪৮, নং ২১৬০; ইবন মাজাহ্‌ ১/৬১৭, নং ১৯১৮। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ১/৩২৪।

অপর বর্ণনায় মাথার অগ্রভাগ ধরে, বিসমিল্লাহ পড়ে এই দুআটি পড়তে বলা হয়েছে। 

আসুন সবাই এ দুটি বিষয়ে আমল করি। এতে  দাম্পত্যে শয়তানের সকল কু-প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে, ইংশাআল্লাহ। 

 
লিখেছেন, মাহদি আবু মাওয়াদ্দাহ   

'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]


আন-নূর ইসলামিক ম্যারেজ মিডিয়া – একসাথে জান্নাতে, ইন-শা-আল্লাহ
সহীহ আকীদাহ সম্পন্ন দ্বীনদার পাত্র-পাত্রী সন্ধান কেন্দ্র

বায়োডাটা পাঠাতে ফরম | আমাদের কাজের প্রসিডিউর | শর্তসমূহ | আমাদের ঠিকানা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *