বিবাহপূর্ব কাউন্সেলিং – এর গুরুত্ব (এক্সপার্টের পরামর্শ)
একটা বিয়েতে দুইটি পরিবারের মধ্যে অনেক পারিপার্শ্বিক, মনোসামাজিক পরিবর্তন আসে। সব অভিজ্ঞ ব্যাক্তিরাও সব জানে তার পরেও অনেক কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকে না। ফলে ছোট ছোট হ্যা,না, কেন?, কি? তাহলে কি হয়েছে? এরকম বিষয়গুলো দিয়ে জটিলতা বাড়তে থাকে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাল কিল্লাওয়ি এর লেখা এই নিবন্ধটি পড়তে পারেন।
বর্তমানের নতুন সমস্যা ভাই বোনদের দ্বীনি জীবনযাপন করার চেষ্টা বনাম পরিবারের ট্র্যাডিশনাল ধার্মিকতা। একটা ছেলে তার বাবাকে বোঝাতে পারবে না, একটা মেয়ে তার মা কে বোঝাতে পারবে না। আমাদের দেশে অধিকাংশ পরিবারেই মত প্রকাশের রীতি নেই।
যার ফলে অধিকাংশ দাম্পত্য কলহে কমন কথা, “আমি আব্বা-মা র সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না” “শত হলেও তারা বাবা-মা”। পরিস্থিতি ভেদে সবামি-বউ সবার জবানেই চলে আসে এমন অসহায় আকুতি।
প্রত্যেক বাবা মায়ের কাছে তার সন্তানই সেরা। অন্যের সন্তানকে কোনভাবেই নিজের সন্তানের কাতারে আনা যায় না। অধিকাংশের ক্ষেত্রেই না।তাই সহজ সহজ সমাধানগুলো তারা নিরপেক্ষ ভাবে দিতে পারেন না। ব্যাতিক্রম সব কিছুতেই আছে। তবে এটা আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যাবস্থার বাস্তবতা।
গাইনোকোলজিসট এর রুমের বাইরে ওয়েট করছি। অনেকেই অপেক্ষা করছে। এক শাশুড়ি মা এসেছেন ছেলে ও ছেলের বউকে নিয়ে। কোন সন্দেহ নেই তিনি কেয়ারিং, তিনি ভাল শাশুড়ি মা। হয়তো সকলের ভাল লাগছে এটা দেখে। কিন্ত একজন ম্যারেজ কাউন্সেলর যা দেখছে বা বুঝছে তা অন্যরা দেখতে পায় না এটাই তো স্বাভাবিক।
এক মায়ের কাছে তার মেয়ের মোবাইল নম্বর চেয়েছিলাম। ফোনে কথা বলে তার থেকে তার পছন্দ- অপছন্দ বুঝে নিব। মায়ের বক্তব্য, তার ইঞ্জিনিয়ারিং করা মেয়ে খুব সহজ- সরল। মা যা বলবে তাই; মেয়ের নিজের কোন পছন্দ নেই। অনেক চেষ্টার পরে মেয়েটার সাথে কথা হয়েছিল কিন্তু ঘাড়ের উপর দাড়িয়ে ছিল ‘মা’। আমার খুব প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হয়েছিল ঐ মায়ের কাছে, “মেয়েকে শিখিয়েছে কিনা বরকে কিভাবে ভালবাসবে কতটুকু ভালবাসবে?” ছোট মেয়ে না, কিছুই তো বোঝে না। তাকে তো মুখে তুলে খাইয়ে দেয়ার মত বিষয়টাও বোঝানো দরকার!
এক বাবা এসে বলছেন, ছেলের জন্য হালকা গড়নের স্লিম মেয়ে চাই। যে বাল্কি হবে না। যেই সমাজে বাবারা হবু পুত্রবধুর দৈহিক গড়ন কেমন হবে সেই রিকয়ারমেনট নিয়ে কথা বলেন সাবলীল ভাবে, সেই বাবার মস্তিস্ক নিয়ে একটু নাড়াচাড়া একজন কাউন্সেলর করতেই পারে। তাকে সম্পর্কের সীমা পরিসীমা দেখাতে পারে।
মা ছেলে এসছে কাজ বুঝিয়ে দিতে। মা বলেই যাচ্ছে, আমার ছেলের জন্য এরকম মেয়ে চাই, ওরকম মেয়ে চাই। ছেলের কি বলার আছে মাই তো সব বলে দিল। আমি ভাবছি, এই ছেলে কি কোন অবস্থাতেই মাথা তুলে কথা বলা শিখেছে, বলতে পারে? কাউন্সেলিং দরকার। ইনস্ট্যান্ট শুধরে যাওয়ার জন্য নয়, চিন্তার ট্রেনটাকে সঠিক ট্র্যাকে নেওয়ার জন্য।
মা ও মেয়ে এসছে। আমি খুব মনযোগের সাথে মেয়েকে শুনতে চাইছি। ডিভোর্সড ক্ল্যায়েনট। অনেক কিছু জানা বোঝার বিষয় আছে। কিন্ত মায়ের তো দুঃখের নদী বয়ে যাচ্ছে। কোন সন্দেহ নেই সন্তানের ভাল থাকা মন্দ থাকায় যদি কারো কিছু এসে যায় তবেই সেই প্রথম মানুষ হন মা। তারপর বাবা। এক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম আছে।
বিরক্ত হয়ে দিলাম মা কে রুম থেকে বের করে। না, ভদ্রতা বজায় রেখেই বললাম, আপনার মেয়ের সাথে একা কথা বলব, আপনি কাইন্ডলি পাশের রুমে ওয়েট করুন।
এরকম সভ্য সমাজে চলছি আমরা। প্রাইভেসির লেভেল সব জায়গাতেই প্রায় জিরো।
গতকালের কাউন্সেলিং সেশন এর কথা বলছি, পারিবারিক দৈনন্দিন কলহের জের ধরে ডিভোর্সের পর্যায়ে পৌঁছেছে। জানতে চাইলাম দুই পরিবারে এমন কে আছে যে দুজনেরই শুভাকাঙ্ক্ষী এবং অন্যদের মধ্যে পজিতিভিটি স্প্রেড করতে পারবে? তেমন খুঁজে কাউকেই পেল না।
একজন কাউন্সেলর নিরপেক্ষ ব্যাক্তি। তিনি আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। এই পৃথিবীতে টাকার বিনিময়েও কাউকে বসিয়ে দুটো দুঃখের কথা শোনানো যায় না। যিনি কাউন্সেলিং করেন তিনি শোনেন, খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং সু পরামর্শ দেন।
কাউন্সেলিং সম্পর্কে আরও জানতে এই পিডিএফটি পড়তে পারেন। জাতীয় মনোসামাজিক কাউন্সেলিং নীতিমালা ২০১৬ (খসড়া)
আপনার কাছে আপনার দাম্পত্য জীবনের গুরুত্বের উপর নির্ভর করছে এই লেখার গুরুত্ব।
ভাল থাকুন সবাই, দোয়া রইল।
লিখেছেন,
কাজী দিশা
ম্যারিজ কাউন্সেলর
আন-নুর ইসলামিক ম্যারিজ মিডিয়া