বইয়ের ফেরিওয়ালা থেকে সম্পর্কের ডাকপিয়ন

annurmatrimony's story

ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। ছুরি কাঁচির ভয়ে সেটা এডমিশন কোচিংএস্টেজেই থেমে যায়। খুব কৌতূহল নিয়ে ওটি (অপারেশন থিয়েটার) রুম দেখতে গিয়েছিলেন। ফলাফল বাসায় এসে ২ ঘণ্টা সেন্সলেস। জীবনের প্রথম স্বপ্ন আর বাস্তবতা মিলল না। বুঝলেন মানব শরীর বিদ্যার নাড়ি নক্ষত্র তার হজম হবে না। কাটা ছেড়ার কাজ পারবেন না।  আশাহত মন স্রোতেই গা ভাসিয়ে দেয়। ফিজিক্সে অনার্সে ভর্তি হলেন। ২ দিন ক্লাস করে আর যেতে ভাল লাগল না। এরপর এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ ভর্তি হলেন। সে পড়াও ভাল লাগছে না। আসলে গতানুগতিক পড়াশোনা, কাজ কোন কিছুই ভাল লাগছে না। তারপরেও পরিবারের দিকে তাকিয়ে যেনতেনভাবে ডিগ্রী পাশ করলেন।

চাকরি থেকে ভিন্নধর্মী কাজ তাকে খুব আকৃষ্ট করে। অনলাইনে একটা প্রজেক্ট করলেন “Miracles of Allah”. বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কিছুতে আল্লাহর নাম দেখা যায়। এরকম miracles গুলো নিয়ে একটা প্রজেক্ট করলেন। পৃথিবীর কোথায় এরকম কি হয়েছে সেরকম সব ঘটনাকে এক জায়গায় করে একটা ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে মানুষকে জানানো। বেশ কিছুদিন এই কাজটা চালিয়ে গেছেন।

পরবর্তীতে আগ্রহ তৈরি হল সীরাহ এ্যালবাম করার।

এদিকে বাড়ির লোক চাইছেন ছেলে সিরিয়াস কিছু করুক। ভাল কোন চাকরি করুক নয়তো ব্যবসা করুক। বাড়ির চাপে এক পরিচিত এলাকার বড়ভাই এলাকাতেই একটা ঠিকানা দিলেন। সেখানেই জীবনের প্রথম চাকরির ইন্টারভিউর মুখোমুখি হওয়া। আর সেদিনই নিজেকে অন্যের মাধ্যমে আর একটু অন্যরকম ভাবে জানলেন। যার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে গিয়েছিলেন তিনি স্পষ্টতই বলে দিলেন, “ওহে ভায়া, এই  চাকরি বাকরি তোমার জন্য নয়, যাও গিয়ে নিজের মত করে ব্যবসা কর”।ভদ্রলোক সেদিন কি বুঝেছিলেন কে জানে তবে খুব ভুল কিছু বলেননি।

ফলাফল চাকরিটা হল না। তথাপি চাকরি করতে হবে পেতে হবে এমন তাড়া ও নেই।  

দু’চারটা টিউশনিই সীমিত টাকার যোগান দেয়। এভাবে সে খারাপ নেই। আরচাকরি তার কখনোই কাম্য ছিল না। তবে মাথায় ঘুরতে থাকত ব্যবসা,ব্যবসা, ব্যবসা।আর দশজন করতে চায় না, চিন্তাকরে না এরকম ভিন্নধর্মী কাজ। উদ্যোগী হতে চান এরকম কাজের। কিন্তু কিভাবে? 
এদিকে বাসা থেকে সবাই বলেই যাচ্ছে কিছু করতে, এভাবেটিউশনি করে আর কতদিন।

নতুন নতুন বিষয় শিখতে পছন্দ করেন।ভাবলেন Oracle Language শিখবেন। Oracle part-1 শেষ করে মনে হতে লাগল এটা একটা শখ মাত্র, এটা Life না। মনের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হল Then what is life?

বেশিকিছু না বুঝলেও জীবন সম্পর্কে এতটুকু বুঝেছেন যে শখের সাথে সম্পৃক্ত পেশায় যেতে চান।

চিন্তাভাবনার দোলাচলে কিছুদিন পার হয়ে গেল।  


হঠাৎই একদিন মনে হল টিউশনি আর না, এবার অন্য কিছু ট্রাই করতেই হবে। হাতে আছে টিউশনির পনেরশো টাকা। কি হবে এ দিয়ে?

বাবা সরকারী চাকরিজীবী ছিলেন।পাশাপাশি এলাকায় একটা মুদির দোকান আছে। অনেক ভেবে চিনতে নিজেদের মুদির দোকানের গোডাউন ঘরে একটা স্পেস তৈরি করলেন।

এই পনেরশো টাকা দিয়েই শুরু হল একজন উম্মাহ সেবকের পথচলা। সহকর্মী হিসেবে সঙ্গে নিলেন ছোটবেলার এক বেকার বন্ধুকে।

এবারের মিশন বই ব্যবসায়ী হওয়া।  

প্রথমদিন ৪/৫ টা বই নিয়ে বন্ধুকে সাথে নিয়ে নরদা এলাকার দোকানে দোকানে বই ফেরি করে ২ঘণ্টা সময় দিয়ে একটা বই বিক্রি করলেন। বুঝতে পারলেন; এভাবে ঠিক হবে না। পাশাপাশি ভেবে যাচ্ছেন কিভাবে এটাকে ঠিকঠাক চালিয়ে যাওয়া যায়। অবশেষে টিউশনির ১৫০০ টাকার মধ্যে ৭৫০ টাকা দিয়ে একটা ফোল্ডিং টেবিল কেনা হল। বাসার সামনের মসজিদে নামাজীদের যাওয়া আসার পথে টেবিল নিয়ে বসতেন। লোকজন আসা যাওয়ার পথে টুকটাক বই কেনে, দাড়িয়ে থেকে পড়ে। ব্যবসায়ে আশা বাড়ছে। এবার আর একটু ভাল জায়গা চাই।

সিদ্ধান্ত নিলেন গুলশান আজাদ মসজিদের মাঠে বসবেন। কিন্তু সেখানে বসার জন্য তো অনুমতি দরকার।তখন গুলশান আজাদ মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন সচিব আব্দুল হান্নান সাহেব।যিনিগুলশান মডেল স্কুল কমিটিতে ছিলেন। আর ঐ স্কুলে পড়ার সুবাধে ওনার সম্পর্কে জানেন।তাই দেরি না করে একটা দরখস্ত লিখে ছুটলেন ওনার কাছে অনুমতি নিতে। আল্লাহ সহায়,অনুমতি মিলল।   

একজন বইয়ের ফেরিওয়ালাকে  কল্পনা করলে এরকমই মনে হবে যে, মাথার মধ্যে একটা ফোল্ডিং টেবিল আর কিছু নতুন পুরান ইসলামিক বই। স্হান আজাদ মসজিদ প্রাঙ্গন।অনেকটা সেরকমই বিষয়টা।

এক জুম্মাবারে শুরু হল আজাদ মসজিদের সামনে বই বিক্রেতা হয়ে ওঠার সফর।এটা রমাদানের সময়কার আগের কথা। ২০০৪ এর কথা বলছি।মসজিদের সামনে ইসলামিক বই। ভালই বেচাকেনা চলছে। এক মাসেই লাভ হল দশ হাজার টাকা। সামনে ঈদ। বন্ধুকে বোনাস ও দিয়েছিলেন।


বই এর সুত্র ধরে বইওয়ালা হিসেবে একটু পরিচিতি তৈরি হয়েছে। আর ব্যবসাটাও আশাহত না।

এবার আর একটু জায়গা পরিবর্তন হল। বইগুলো ঐ ফোল্ডিং টেবিল সহকারে একটা ভাড়াকৃত জায়গা পেল মাসিক একহাজার টাকা চুক্তিতে। সাধ্যের বাইরে তারপরে ও নতুন পথচলা শুরু হল, ভরসা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা। স্হান গুলশান ডিসিসি মার্কেটের বারান্দার একটি পিলার।

বই ব্যবসার পাশাপাশি নতুন নতুন মানুষদের সাথে পরিচিতি বাড়ছে।কেউ কেউ হয়ে যাচ্ছে খুব নিকটতম শুভাকাঙ্ক্ষী।এক সাংবাদিক ভদ্রলোক একটা হাজিদের প্রোগ্রামে ইনভাইট করলেন সাথে বই নিয়ে যেতে বললেন।অন্যদিকে এক শুভাকাঙ্ক্ষী দ্বীনি ভাই annurlibrary.com নামে একটা ওয়েবসাইট করে দিলেন। এটাকে ফ্রি তে করে দেওয়া না বলি। বলি, উপহার, তাহলে সুন্দর করে বলা হয়।

 এভাবে বিভিন্ন অভিজ্ঞজনদের সুপরামর্শ পথচলাকে সহজ করতে থাকল।

সবচাইতে মজার বিষয়, বইওয়ালার ব্যবসা একটু দাড়িয়েছে আর বইওয়ালা ও পড়ুয়া মানুষে পরিনত হচ্ছে। বিষয় সব ইসলাম ভিত্তিক। 
বই থেকে বই, বইওয়ালাকে স্বপ্নওয়ালায় পাল্টে দিচ্ছে। বইওয়ালার জীবন অন্য মানে খুজতে শুরু করেছে।

হঠাৎ একদিন বইবাহক মানুষটি একটু অন্যরকম ঘটনার মুখোমুখি হল। তার এক বন্ধুর দাম্পত্য সম্পর্ক শেষ হওয়ার পথে। তার স্ত্রী বাবার বাড়ি ফিরে গিয়েছে, আর ফিরবনা এই সিদ্ধান্তে অটল। সব শুনে বইবাহক মানুষটি তার বন্ধুকে যে পরামর্শ দিয়েছিলেন তা ছিল এরকম, ” বন্ধু আর কিছুনা তুমি তোমার বউ এর সাথে দেখা করতে যাও, আর অবশ্যই গোলাপ সাথে করে যাবা।”

অবিশ্বাস্য! একটা কি দুইটা গোলাপ মনে পরছে না। যাহোক এই গোলাপ বন্ধুর ম্রিয়মাণ সম্পর্কে সুঘ্রান ফিরিয়ে দিয়েছিল। আজ তারা সুখি পরিবার।

এত সুন্দর একটা কাজ করে বইবাহক মার্কেটের পিলারে বাধা পড়েনি। আল্লাহ তার সুনজর দিয়েছেন, বরকত দিয়েছেন। তাই আবার তার স্হান পরিবর্তনের সুযোগ আসে। এবার জায়গা অন্য এক বড় মার্কেটের চার দেয়ালের মধ্যে। আলহামদুলিল্লাহ্‌। বইগুলো তার মালিক সহকারে একটুকরো ছাদ পেয়েছে।

এই পথচলায় পরিচিত, শুভাকাঙ্খী, সতীর্থের সংখ্যাটাও মাশআল্লাহ বেড়ে চলেছে। এই কাছাকাছি আসার সুবাধেকে কি করে, কে বিবাহিত, কে অবিবাহিত, কার কয়টি ছেলেমেয়ে, কে কেমন মানসিকতার মানুষ; তারও একটা ইনফোপিডিয়া তৈরি হয়েছে বইওয়ালার মস্তিষ্কে।
ও হ্যা যেটা বলা হয়নি চার দেয়ালের জীবনে বইওয়ালা আর তার বইগুলো  একটা প্রাতিষ্ঠানিক নাম পেয়েছে। নামটা না হয় একটু পরেই বলি।
অনেক গল্পবাকি________

এতদিন ওন্যের লেখা, প্রকাশকরা বই কাধে করে ঘোরা মানুষটা ইসলাম সম্পর্কে ভাল বই, মন্দ বই, জাল হাদিসের বই অনেক ধরনের বই ই পড়েছেন। কুফর, শিরক, বিদআত, তাওহিদ, মাজহাব, মানহাজ, কোরআন,হাদীস অনেক অস্পষ্ট বিষয়েই সে স্পষ্ট হয়েছে।

ও তার একটা সুগুনাবলির কথা আপনাদের এখনো বলা হয় নি,আর তা হচ্ছে কল্যানকর কাজ করা ও অন্যকে করতে উৎসাহিত করা, সহায়তা করা। 
হয়তো সেজন্যই নিজে ইসলাম কে জেনে বসে থাকেন নি, অন্যকে জানাতে হবে। এই তাগিদও তার ছিল। আর তাই প্রথম মেসেজ হিসেবে নির্ধারন করলেন “তাওহীদ বা একত্ববাদ” বিষয়টি। তারই একটি সফল প্রয়াশ “তাওহীদের কিশতি”, আলহামদুলিল্লাহ।

Tawheeder Kisti

আবার একটু অতীতে ফিরছি। বর্তমানের ছায়া দেখাতে চাইছি আপনাদের।
মুসলিম উম্মাহর একান্ত কল্যানকামী এই সেবক চলন্ত ও জীবন্তস্বপ্নভান্ডার। সারাক্ষনই ভাবেন কিভাবে মানুষের কাজে আসা যায়। টাকা তো কত ভাবেইউপার্জন করা যায়। কিন্তু যে কাজে আখিরাতের কল্যান নেই, প্রশান্তিনেই, সেই উপার্জনে কতটা ভাল থাকা যায়। এরকমই ভাবেন তাওহীদের কিশতির প্রকাশক।
থেমে নেই পথচলা। আর ও কিছু কাজ তার আমলনামায় যোগ হয়েছে।

বইনিয়ে কাজ করতে করতে পরিচিত হয়েছেন “হিজামা”র সঙ্গে। সিলেটের আব্দুর সবুর ভাইকে নিয়ে করলেন হিজামা নিয়ে ইভেন্ট। বাংলাদেশে হিজামা নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ওটাই প্রথম কাজ।

 ২০১০ এর শেষের দিকে ডাঃ আনিকা বইয়ের সুত্র ধরে যার সাথে পরিচয়, একদিন ফোন দিয়ে একজন এর বিয়ের ব্যপারে বললেন। ওনার বক্তব্য এরকম ছিলযে, বইয়ের সুবাধে নানা জনের সাথে পরিচয় হুতে পারে বইয়ের ফেরিওয়ালার সন্ধানেও কোনপাত্র আছে। ফোনালাপ শেষ করে ছুটলেন সাইবার ক্যাফেতে। উদ্দেশ্য বায়ো ডাটা আনা। সেইশুরু।এভাবে বই নিতে আসা দীর্ঘদিনের পরিচিত কিছু মানুষের ছেলেমেয়েদের বৈবাহিকসম্পর্কের ডাকপিওনের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। যাকে সাধারনত সবাই ঘটকালি, Match making হিসাবে জানে। আমার অবশ্য communicator, coordinator ও বলতে ভাল লাগে। আর সেলিম ভাই বলতে পছন্দ করেন ডাকপিয়ন। আর আমি বলি সম্পর্কের ডাকপিয়ন।

ফলাফল সে যেমন পরিচিতজনদের ডাকপিওনের কাজ করে আনন্দ পেয়েছে তেমনিতাকে ডাকপিওনের কাজে শুভাকাঙ্খীরা ভরসা করতে শুরু করেছে। নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে ঘটকালির কাজ করেন। কিন্তু মানুষের কাছেতো এ খবর পৌঁছানো দরকার। তাই তৈরি করলেন হাতে লেখা ভিজিটিং কার্ড।

৪র্থ বিয়ের কাজ করতে গিয়ে দেখেন পকেটে টাকা থাকেনা। কারণ বিয়ের কাজে বায়োডাটা নিয়ে কথা বলতে হয়, দরকারে একাধিকবার দেখা করতে হয়। আর যেহেতু টাকা নিয়ে কাজ করেন না তাই পকেট থেকেই সব খরচ করতে হয়। এদিকে ১ম বিয়ের কাজ করার পরে দশ হাজার টাকা সম্মানী পেয়েছিলেন।

তারপরেও তখনও ভাবেননি টাকা নিয়ে কাজ করবেন। কিন্তু কাজের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা আলহামদুলিল্লাহ বেড়ে চলেছে। একদিন একজন কাজ নিয়ে এলেন এবং কাজ দিয়ে গেলেন এবং সাথে তিন হাজার টাকা। ঐ ক্লায়েন্টের ভাষ্যমতে একটা নির্দিষ্ট পরিমানের খরচ রাখা উচিত। সেই শুরু হল, তিন হাজার টাকা দিয়ে ডাকপিয়নের সফর। এভাবেই বছর পার হয়ে গেল।

একদিন সৌদি থেকে এক ভদ্রলোক ফোন দিলেন। কাজ দিলেন। এবং পরামর্শ দিলেন রেজিস্ট্রেশন ফি নেওয়ার। আরো বললেন পাঁচ হাজার টাকা হওয়া উচিত। এই পরামর্শক ভাই ছিলেন ডাকপিওনের পাঁচ হাজার টাকার প্রথম ক্লায়েন্ট।    

স্বপ্নের পালে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। বই এর গ্রাহক-প্রকাশক, দ্বীনপ্রেমী মুসলিম, পরিচিতজন, জোয়ান ছেলে-মেয়েদের মা-বাবা, বহু মানুষের সমাগম এই চার দেয়ালের ছোট্ট পরিসরে। কাজও তো একটা নয়। কেউ বই কেনে, কেউ আবার দাড়িয়ে থেকে বই পড়ে, আবার ডাকপিওনের কাজটা যাতে সুন্দরভাবে করা যায় তার জন্য পাত্র -পাত্রীও তাদের বাবা-মা সকলের একটা সংক্ষিপ্ত ইন্টারভিউ হয়, কারো কাউন্সেলিং হয় প্রভৃতি। ডাকপিওনকে আবার ছোটাছুটিও করতে হয়। একা এতগুলো কাজ করা সম্ভব নয় বিধায় আল্লাহর উপর ভরসা করে সহকর্মী রাখা হয়েছে একটা ন্যূন্যতম সম্মানীতে। তাতেই কি আর সমস্যার সমাধান হল। এদিকে অতি ঘনিষ্ট একবন্ধু সার্বক্ষনিক প্রলাপ বকতে লাগল, তাড়া দিতে লাগল আর একটু বড় স্পেস নেওয়ার জন্য। তার এ পরামর্শ তার কল্যানকামী বন্ধুর জন্য।

তাওহিদের কিশতি’র মাঝি আবার ভাবতে শুরু করল সে আসলে কি করতে চায়। তাকে উপার্জনও করতে হবে, আর মুসলিম উম্মাহর জন্য কাজও করতে হবে। আর বহুদিন ধরেই জীবনের সুত্র তৈরি হয়েছে মুসলিমের জীবন মানেই কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন। 
সব ঠিকই চলছে, কিন্তু সবাইকে কিভাবে কোরআন ওসুন্মাহর ছাঁচে নিয়ে আসা যায়। 
অতঃপর, 
একটা রিভিউ,  কি করা হয়েছে আর কি করা হয় নি, যা করতে হবে।
ইসলাম সম্পর্কে মানুষকে জানানোর জন্য লাইব্রেরি হয়েছে।
কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক পরিবার গঠনের লক্ষ্যে মুসলিম দ্বীনি পাত্র-পাত্রীদের বিবাহের ডাকপিওন ও মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও কাজ চলছে।

কিন্তু এতেও তো দায়িত্ব শেষ হচ্ছে না। যারা পুর্বেই পরিবার গঠন করেছে তাদেরকে দাম্পত্যকলহ, পরিবার ভাঙ্গন, পরকিয়া প্রভৃতি ঘুনপোকা থেকে বাঁচাতে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক প্রেসক্রিপশন তো পৌছাতে হবে। দ্বীনি কাউন্সেলিং দরকার, মানসিক কাউন্সেলিংও দরকার আর দরকার বদনজর, জ্বীন ইত্যাদির বিষয়ে পরামর্শ ও চিকিৎসার। 

অনেক কিছুই হচ্ছে, একটা সুন্নতি পরিবারের প্রাথমিক চিকিৎসাও হবে সুন্নাহভিত্তিক। তাহলে তো তাদের হিজামার সম্বন্ধেজানাতে হবে এবং হিজামা সেবা দিতে হবে। তার জন্যও সময়, টাকা, পরিসর সবই দরকার।

মাঝ সমুদ্রে মাঝি দিক্বিদিক নয়। বন্ধুর কথা মনে ধরেছে। তাড়িয়ে বেড়ানো স্বপ্নগুলো এবার একটা মাথাগোজার ঠাই চায়। ওরা একসাথে পৃথিবীর আকাশে উড়তেচায়।
কিন্তু,
শুধু একটা স্পেস নিলেই তো হবে না। একটু বড় পরিসরে কাজ শুরু করতে গেলে কত এক্সেসরিজ লাগবে। কোথায় পাবে? 
প্যানপ্যানানো বন্ধুটাই প্রথম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল একটা সেকেন্ড হ্যান্ড কম্পিউটার দিয়ে। সাথে বই বাহকের পুরোনো চেয়ার টেবিল তো আছেই। ইতিমধ্যে Runner এর সফলতায় খুশি হয়ে সন্তুষ্ট গ্রাহকেরা কিছু কিছু করে সম্মানি দিয়েছেন। 

তারপর, 

তারপরের গল্প বাস্তবতা আপনাদের অনেকেরই জানা। 
প্রথমে যে নামটা আপনাদের কাছে হাইড করে গিয়েছিলাম তা হচ্ছে,
আন-নুর ইসলামিক লাইব্ররি। (বইয়ের ফেরিওয়ালা হয়ে ওঠার জার্নি)
আর স্বপ্ন উড়িয়ে বাকি যে নাম গুলো যোগ হয়েছে, স্বপ্ন উকি দিচ্ছে তাহলো, 
“আন-নূর ইসলামিক ম্যারেজ মিডিয়া”
“ইখলাস হিজামা এন্ড রুকিয়া শরিআহ ইনস্টিটিউট”
স্বপ্ন, আন-নূরকে পরিপূর্ণ পারিবারিক সমাধানের কেন্দ্র করে তোলা, কাউন্সেলিং নিয়ে কাজ করা, ভিন্ন ধারার স্কুল নিয়ে চিন্তা করা, দাম্পত্য- পরিবার- শিশু লালন পালন নিয়ে আলোচনা, সেমিনার, কোর্স ইত্যাদির আয়োজন করা। 
কিছু চলছে, কিছু পরিকল্পনা চলছে… এক ছাদের নীচে; 

*****এই হল একজন স্বাপ্নিক মানুষের স্বপ্ন ওড়ানোর গল্প******

*****বইয়ের ফেরিওয়ালা থেকে সম্পর্কের ডাকপিয়ন হয়ে ওঠার গল্প******

আন নূরের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, কাজি মুহাম্মদ সেলিম ভাইয়ের গল্প।

লিখেছেন: দিশা আপা (ম্যারেজ কাউন্সেলর)
প্রধান, মহিলা বিভাগ, আন-নূর ইসলামিক ম্যারেজ মিডিয়া 

One thought on “বইয়ের ফেরিওয়ালা থেকে সম্পর্কের ডাকপিয়ন

  1. আলহামদুলিল্লাহ। তাওহিদের কিশতি বইটা আমার আছে।আন নুর লাইব্রেরিতে কেনাকাটার উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম। জাজাকাল্লাহ।আল্লাহ (swt) আপনাদের সকল নেক কাজ কবুল করুন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *